
প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান সচিবেরা। ২০ ধাপের মধ্যে তাঁদের মূল বেতনই নির্ধারিত ৭৮ হাজার টাকা। আর শেষ অর্থাৎ ২০তম ধাপের মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানান। চলতি বছরের আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বর এর দিকে কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে।
সরকার ২০১৫ সালে প্রায় ১০০% বেতন বৃদ্ধি করে সরকারী কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করেছিল। এরপর থেকে প্রতি বছর জুলাই মাসে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন কর্মীরা। মূল্যস্ফীতি তার চেয়ে বেশি হওয়ায় বেতন স্কেল বৃদ্ধির কথা ভাবছে সরকার। এক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের পরিবর্তে ১০ শতাংশ বা মূল্যস্ফীতি-সামঞ্জস্য ভাতা যোগ করার বিধান থাকতে পারে।
সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ বিভাগ কাজ করলেও বাজেটে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা থাকবে না বলে জানা গেছে। বাজেটের পাশাপাশি জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করে পরবর্তীতে ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। আর নির্বাচনের আগে এ ঘোষণা আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান বেতন স্কেল বহাল রেখে কীভাবে সরকারি কর্মচারীদের সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। তবে বাজেট ঘনিয়ে আসায় বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে কোনো উল্লেখ থাকবে না।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন বেতন স্কেল করতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। সেক্ষেত্রে একটি ধারা সংশোধন করতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগে।
আমরা মুদ্রাস্ফীতি সামঞ্জস্য করার জন্য কিছু করতে চাইছি। 2023 বাজেটের পর আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বেতন স্কেল সংশোধনের প্রয়োজন এড়াতে সর্বশেষ বেতন স্কেলে এই ইনক্রিমেন্ট যোগ করার বিধান রাখা হয়েছে। তবে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকায় ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হওয়ার পরও সরকারি কর্মচারীদের প্রকৃত বেতন কমছে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। এ কারণে বিদ্যমান বেতন স্কেলে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের বিধান সংশোধিত হতে পারে।
বরং প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির হার হিসাব করে কীভাবে ইনক্রিমেন্টের সুবিধা দেওয়া যায় তা নিয়ে কাজ করছে অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন বেতন স্কেল দাবি করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নাকচ করে দেন। বিকল্প হিসাবে, ২০ শতাংশ গ্র্যাচুইটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তবে জাতীয় বেতন স্কেলের বিধানের অধীনে এটি সম্ভব নয়। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫-এ জারি করা জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেটে স্পষ্টভাবে গ্র্যাচুইটি বিলুপ্তির উল্লেখ রয়েছে।
একটি ধারায় বলা হয়েছে, ‘জাতীয় বেতন স্কেল যে তারিখ থেকে কার্যকর হবে সেই তারিখ থেকে গ্র্যাচুইটি বন্ধ হয়ে গেছে বলে গণ্য হবে।’ ফলস্বরূপ, নতুন বেতন-স্কেল, গ্র্যাচুইটির চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারী কর্মচারীদের বেতন মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করা। মাহবুব আহমেদ ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়নের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা যখন বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করি তখন মূল্যস্ফীতি কম ছিল।
এ কারণে নতুন বেতন স্কেল গঠন না করে প্রতি বছর ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট সুবিধার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। এর ফলে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যোগ হলেও সরকারি কর্মচারীদের প্রকৃত বেতন কমবে। সেজন্য অর্থ বিভাগকে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ধরে রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির হার হিসাব করে নতুন ইনক্রিমেন্ট যোগ করতে হবে। তবে এই বছর যেহেতু ব্যয় সংকোচনের বছর, তাই মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য করতে কমপক্ষে ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ধারা সংশোধন করা যেতে পারে।